মার্কেটারস’ দ্যা ফ্রন্টলাইনার

চীন থেকে প্রথম উৎপত্তি হওয়ার পর; বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কথা প্রথম জানা যায় ৮ই মার্চ, ২০২০ সালে (১ বছর, ৫ মাস, ২ সপ্তাহ ও ১ দিন আগে) এবং প্রথম মৃত্যুটি ঘটে ১৮ই মার্চ, ২০২০ সালে। এরপরের দুই মাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ৩ অংকের মধ্যে ছিল যা বাড়তে বাড়তে জুলাই ২০২১ মাসে সর্বোচ্চতে পৌঁছেছিল।

আমাদের আজকের আলোচনা’র বিষয়বস্তু এই বৈশ্বিক মহামারির কবলে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যে মানুষগুলো জীবন বাজি রেখে সেবাদান করে গেছেন সেই সকল পেশার মানুষদের নিয়ে। যাদের কে ইতিমধ্যে ফ্রন্টলাইনার হিসাবে আমরা শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছি। ডাক্তার-নার্স, প্রশাসন,পুলিশসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বত্র সাধুবাদ জানাই।

আমরা যখন পেশা’র হিসাব নিকাশ কসা শুরু করি তখনই সামনে চলে আসে দেশের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি মার্কেটিং প্রফেশনালস, যারা দেশের প্রতিটি মানুষের সকল প্রয়োজনের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে আসছেন দিন রাত । অনলাইন–অফলাইন যে প্রক্রিয়ায়ই হোক আপনার চাহিদা মিটিয়ে থাকেন যথাযথ। ঠিক সময় পেয়ে যাচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী- স্বাস্থ্য সেবা সামগ্রী–পোশাক–ইলেকট্রনিক–হোটেল সেবা ইত্যাদি হাজারো পণ্য সেবা যা না হলে জীবন চলাই মুস্কিল।

একটু ভাবুন তো! করোনার এই ভয়াল আতঙ্কে আপনি যখন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না তখন আপনার অনলাইনে অর্ডার করা খাদ্যটি যে মানুষটি পৌঁছে দিলেন কিংবা বাড়ির পাশের মুদির দোকানে আপনার কিচেনের সকল পণ্য সরবরাহ করে গেল! তিনিও আপনার-আমার আশে পাশের সাহসী একজন মানুষ।তিনি একজন মার্কেটিং প্রফেশনাল/সেলস প্রফেশনাল!!

আমরা যদি একটু তথ্যর নির্দেশনা দেখি প্রায় ১৬ কোটি ৪৬ লক্ষ মানুষের দেশ বাংলাদেশ। চাকরিজীবীদের মধ্যে থেকে প্রায় ২৩ লাখ সরকারি, প্রায় ৫ লাখ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আর লাখ ছয়েক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের বাদ দিলে বাকি যে ৩ কোটি ৮০ লাখ জন (মোট কর্মজীবীদের ৫৬%)বেসরকারি চাকরি করেন। আর এই সংখ্যার প্রায় ৫০ লাখের উপর মানুষ সরাসরি মার্কেটিং/সেলস প্রফেশনে সংযুক্ত আছেন। এবং অন্য আরও প্রায় সমান সংখ্যক মানুষ এই পেশার সাথে বিভিন্নভাবে সংযুক্ত।

এই বিশাল সংখ্যার প্রফেশনাল গ্রুপ বা মার্কেটিং কমিউনিটি দেশের প্রায় ৩.৫ কোটি পরিবার কে প্রতিদিন – প্রতিবেলা তাদের প্রয়োজনীয় সকল চাহিদার যোগান দিয়ে যাচ্ছেন নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে, সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন জীবন বাজী রেখে। আমরা যদি একটু গনিত করে দেখি, দেশে দিনে ১৬ কোটি (ধরে নিলাম)মানুষ তিন বেলা ভারি এবং দুই বেলা হাল্কা খাবার যদি গ্রহণ করেন তবে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রায় ৮০ কোটি ইউনিট খাবার যোগান দিতে হয়, তেমনি পোশাক, ঔষধ,জরুরি এবং অন্যান্য ভোগ্যপণ্য নির্দিষ্ট ঠিকানায় নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে দেয় কে??

একটি ছোট গল্প বলি; না, একে গল্প বলা ঠিক হবে না, একটি ঝড়ো হাওয়ায় বিপন্ন জীবনের কথা।

মিজানুর রহমান (ছদ্ম নাম) একটি ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির সেলস অফিসার, তার ছোট সংসার নিয়ে বসবাস উত্তরায়। পাঁচ বছরের একটি কন্যা এবং অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নিয়ে ভালো -মন্দ দিন কেটে যাচ্ছিলো তার। শতাধিক দোকানে নিয়মিত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় এবং সরবরাহ তার দায়িত্ব। মার্চ ২০২০ এর শেষে করোনায় ঘরে ফিরেছে শহরের সকল পেশার মানুষ শুধু রাস্তায় থেকে গেছে পুলিশ–আর্মি–বিজিবি আর সেলস অফিসার মিজান। পেশার চাপে স্ত্রী -সন্তান ভুলে করোনোর ছোবল পাশে ফেলে ছুটে বেড়িয়েছে দোকান থেকে দোকানে, সময়ের পণ্য সময়ে সরবরাহ দিতে হবে তাকে। জুনের শেষের দিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয় মিজান এবং তার পরিচিত একজন দায়িত্বরত পুলিশ কন্সটেবল। পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হন কনস্টেবল এবং তার সহায়তায় এগিয়ে আসেন পুলিশ প্রশাসন এবং সরকার। সুস্থ হয়ে ফিরে যান কাজে। আমরাও কোভিড ফ্রন্টলাইনার হিসাবে তাকে স্যালুট জানিয়েছি এখনো জানাই। কিন্তু অসচ্ছল মিজান, ঢাকা শহরের কঠিন বাস্তবতায় একটু বাঁচার তাগিদে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতাল কোথাও মিল ছিল না একটুকু ঠাঁই, অবশেষে ঢাকার কালো দামী পিচ ঢালা রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যু বরন করেন জুলাই এর প্রথম সপ্তাহে। পিছনে পড়ে থাকে ৫বছরের কন্যা, আগামী-সন্তান এবং এক অন্তঃস্বত্বা অসহায় নারী। তারা কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা আমরা বা সমাজ কেউ জানিনা বা জানার প্রয়োজন ও মনে করিনা। এমন অনেক মিজান আজ আমাদের মাঝে নাই যাদের দুর্দান্ত প্রচেষ্টা আর আন্তরিকতা দেশের অর্থনীতিকে করেছে বেগবান।

ইতিমধ্যে অসংখ্য সেলস প্রফেশনাল কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বিপন্ন হয়েছে অনেকের স্বপ্ন। চাকরি হারিয়ে পথে বসার উপায় অনেকের। হাত পেতে সহায়তা নেয়ার পরিস্থিতিতে নেই তারা, কারন কিছু দিন আগেও সে সহায়তা দিয়ে অভ্যস্থ ছিল।

সরকার কিংবা সামাজিক ভাবে যেহেতু আমরা এই মহামারীতে তাদের কাজের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করি নাই ফ্রন্টলাইনারদের। তাই ফ্রন্টলাইনার মানুষগুলো আজ অনেকটা অসহায়।

পরিশেষে, দেশের অর্থনীতি উন্নয়নের চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে যাওয়া এই মেধাবী এবং পরিশ্রমী বৃহৎ জন গোষ্ঠীর প্রতি সরকার এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ সদয় দৃষ্টি রাখবেন এবং তাদের কে ফ্রন্টলাইনার হিসাবে মর্যাদা করবেন বলে প্রত্যাশা রাখি।

 

Marketers’ the Frontliner. This article was also published on the 4th Marketing Day (2021) Publication.

Share this article
Shareable URL
Prev Post

Dhaka University Marketing Alumni Association-MAA Vector Logo (eps & png)

Next Post

ক্যাম্পেইন ব্রিফ: কি, কেন, কিভাবে?

Read next

দাঁত শক্ত, নাকি রুটি?

প্রোডাক্টের কোয়ালিটি ও প্রতিষ্ঠানের আভিজাত্য উভয়ের কল্যাণে ফুরফুরে আত্মবিশ্বাসে ফাইজারে কাজ করেছি। চাকরী…
0
Share