মার্কেটিং নামা ০৪ : গেরিলা মার্কেটিং Guerrilla Marketing

আজকাল আমাদের দেশে এমনকি পুরো পৃথিবীতে স্টার্টআপ (Startup) কিংবা এন্ট্রেপ্রেনারিয়াল বিসনেস (Entrepreneurial Business) এর ব্যাপক জয়জয়কার হচ্ছে। ইদানিং কালে মোটামুটি একটি ভালো স্টার্ট-আপ কালচার আমাদের দেশে গড়ে উঠছে।

স্টার্টআপের এমন উত্থান অবশ্যই একটি ভালো দিক। কিন্তু অনেকগুলো স্টার্টআপই বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। অন্য আর ৮/১০টি ব্যবসায় থেকে স্টার্টআপের ব্যবধান রয়েছে। বিশেষ করে স্টার্টআপের মার্কেটিং স্ট্রাটেজি অন্য ব্যবসায়ের জন্য প্রয়োগকৃত মার্কেটিং স্ট্রাটেজি থেকে ভিন্ন। সাধারণত স্টার্টআপের প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসগুলো ইউনিক হয়ে থাকে।

আমাদের অনেকেরই একটি ভুল ধারণা হচ্ছে ইউনিক যেকোনো কিছুই বাজারে ভালো ব্যবসায় করতে পারবে। কিন্তু বিষয়টি সবসময় এমন নয়।
লার্নিং কিংবা কাস্টমার লার্নিং একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাস্টমার লার্নিং বলতে মূলত একটি প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস ব্যবহার করার পর কাস্টমারের ওই প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস সম্পর্কে ধারণাকে বোঝায়। আমরা যেমন করতে করতে কোনো কিছু শিখে থাকি তদ্রুপ একটি প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস ব্যবহার করলেই কাস্টমার তার সম্পর্কে জানতে পারে।

বড় ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে কিছু কিছু পাইওনিয়ার কাস্টমার থাকেন যারা প্রথমে প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসটি ব্যবহার করেন এবং পরে বাকিদের কাছে ওই প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসের কথা ছড়িয়ে পরে। আবার বড় ব্যবসায়গুলোর প্রচার এবং প্রসার বাবদ অনেক বড় বাজেট থাকে। কিন্তু স্টার্টআপগুলোর ক্ষেত্রে খরচ মিনিমাইজও একটি বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। তাই স্টার্টআপগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার গেরিলা মার্কেটিং স্ট্রাটেজি। তবে মনে রাখতে হবে-
বড় ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বড় বাজেট প্রচার এবং প্রসারণের জন্য > ফলাফল কিন্তু সবসময় বড় নাও হতে পারে।
স্টার্টআপ কিংবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের জন্য কম বাজেট > কিন্তু ফলাফল হবে বড়।

Marketing strategies for start-ups are totally different from traditional marketing tools। Start-ups are unique examples of systematic optimization of revenue and minimization of costs। To be able to touch the sky without buying an air-ticket – this simple analogy summarizes the essence of marketing strategies in start-ups। For start-ups, first create an essence of being in the market by utilizing guerrilla marketing tools and then optimize the systematic flow of WOM।

– Nur-Al-Ahad (2019)

একদম সহজ ভাষায়, ট্রাডিশনাল মার্কেটিং একটিভিটিস এর বাইরে ব্যতিক্রমধর্মী কিছু করাই হচ্ছে গেরিলা মার্কেটিং।

আমাদের দেশের অনেকগুলো স্টার্ট-আপ রয়েছে তবে সঠিকভাবে গেরিলা মার্কেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ খুব একটা দেখা যায় না। কিছু উদাহরণ দিলে গেরিলা মার্কেটিং পদ্ধতির সফল প্রয়োগ সম্পর্কে ভালো ধারণা আসবে:

    ১। ইদানিং বেশকিছু স্টার্টআপ তৈরী হচ্ছে যারা মূলত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য বেশকিছু কার্যকরী অ্যাপ (App) বাজারে নিয়ে আসেন। কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশে এই রকম অ্যাপের বাজার তৈরী করা। এই ক্ষেত্রে স্বল্প খরচের একটি পদ্ধতি হতে পারে Undercover মার্কেটিং।
    যেমন: মনে করুন আপনি একটি স্টার্টআপ কোম্পানি তৈরী করলেন যা দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলোর প্রস্তুতিতে সাহায্য করবে এমন একটি অ্যাপ তৈরী করলো। এখন স্টার্টআপ হিসেবে আপনার বড় রকম বিজ্ঞাপনের সুযোগ নেই। আবার অ্যাপের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিটাই বেশি জরুরি, তাই আপনি বেশকিছু ভলান্টিয়ার সিলেক্ট করলেন যারা মূলত আপনার অ্যাপের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে। এক্ষেত্রে ভলান্টিয়ারদের কাজ হবে তারা যে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য তা নিয়ে বন্ধুদের আলোচনা করা এবং আলোচনার কোনো এক পর্যায়ে আপনার app টির কথা উল্লেখ করা। এতে করে কিন্তু আপনার app এর প্রমোশন হয়ে যাবে।
    ২। অনেকে আবার নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে কাজ করেন। এধরণের প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে কাস্টমার ফিডব্যাক এর গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই ক্লাস্টার করে কিছু স্বল্প সংখ্যক কাস্টমারকে এ ধরণের প্রোডাক্টের স্যাম্পল দেয়া যেতে পারে।
    ৩। আবার অনেকেই আছেন যারা সার্ভিস নিয়ে কাজ করেন। যেমন – আপনি এমন একটি স্টার্টআপ তৈরী করলেন তা অনলাইনে স্বাস্থ্য সেবা দিবে, এক্ষেত্রে কিন্তু অনেক রকমভাবেই ব্যবসায়টিকে প্রমোট করা যায়।
    তবে Ethnographic মার্কেটিং করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। এই পদ্ধতিতেও কিছু ভলান্টিয়ার নিয়োগ দিতে হবে যাদের কাজ হবে এলাকার কোনো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে এই সার্ভিসটি ব্যবহার করা। এতে করে কিন্তু এই সার্ভিস সম্পর্কে এক সাথে অনেক লোক জানতে পারলে যা পরবর্তীতে সুবিধা দিবে।
    ৪। আবার কিছু কিছু কোম্পানি আছে যারা অ্যাপ এবং সার্ভিস দুটো নিয়েই কাজ করেন। উদাহরণস্বরূপ পাঠাও কিংবা উবার এর কথা বলা যেতে পারে। এধরণের সার্ভিসের ক্ষেত্রে গ্রহনযোগ্যতা অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
    তাই গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য experiential মার্কেটিং স্ট্রাটেজি অনুসরণ করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে আগে কিছু স্বল্প দূরুত্বের ফ্রি রাইড সার্ভিস দিতে হবে। যেমন – কিছু শিক্ষা প্রতিষ্টানের ছাত্র-ছাত্রীদের এমন সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এতে করে তারা রাইডটি সম্পর্কে জানবে আবার পরবর্তীতে তারা অন্যদেরও এই রাইড সম্পর্কে জানাবে।

আরো বেশকিছু উপায়ে স্টার্আপগুলোর বাজার সম্প্রসারণ করা যায়। তবে স্টার্টআপগুলোর ক্ষেত্রে অবশ্যই এই রকম গেরিলা মার্কেটিং স্ট্রাটেজি অনুসরণ করে এগিয়ে যেতে হবে। অন্য ব্যাবসায়গুলোর তুলনায় স্টার্ট-আপগুলোর একটি বড় সুবিধা হচ্ছে ইউনিক প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস।
কিন্তু এই ইউনিক প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসকে কাস্টমারদের মাইন্ড এ নিয়ে যেতে হবে। আর এক্ষেত্রে প্রথমেই কাজ করবে গেরিলা মার্কেটিং পদ্ধতিগুলো।


আরও পড়ুনঃ

মার্কেটিং নামা ১

মার্কেটিং নামা ০২ – কোয়ান্টিটেটিভ মার্কেটিং Quantitative Marketing

মার্কেটিং নামা ০৩ : ওয়ার্ড অফ মাউথ (Word of Mouth- WOM)


Nur-Al-Ahad

BBA (University of Dhaka, Bangladesh) 14th Batch
MBA (University Putra Malaysia, Malaysia)
Master of Engineering (Toyohashi Tech, Japan)
Email: nur.al.ahad.mkt@gmail.com

 


Share this article
Shareable URL
Prev Post

ব্র্যান্ড প্রাক্টিসনার্স বাংলাদেশ – প্রথম আলোর ‘বিজনেস অর ব্র্যান্ড’ ওয়ার্কশপ

Next Post

Best Brand Award Bangladesh 2019 – Winner List

Read next
0
Share