মার্কেটিং নামা ০৬ : মার্কেটিং মিক্স মডেলিং – Marketing Mix Modelling

মার্কেটিংকে আজকাল বিজ্ঞান বলা হচ্ছে অনেক জায়গায়। অনেকেই আসলে বিষয়টি নিয়ে অনেক রকম প্রশ্ন করে থাকেন। ইদানিং মার্কেটিং বিষয়ে গণিতের প্রয়োগ অনেক বেড়ে গিয়েছে।

মার্কেটিংয়ে গণিতের সাথে সম্পর্ক নিয়ে বেশকিছু মডেল রয়েছে। এমন একটি মডেল হচ্ছে মার্কেটিং মিক্স মডেলিং (Marketing Mix Modelling)। মার্কেটিং মিক্স কিংবা ফোর পি সম্পর্কে আমরা মোটামুটি সবাই জানি। আজকের যুগে আমরা যে মার্কেটিংয়ের ফোর পি সম্পর্কে জানি তা মূলত ম্যাকার্থি ১৯৬০ সালে প্রবর্তন করেন।

মার্কেটিং মিক্স হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে বেশকিছু হাতিয়ার, মার্কেটিংয়ে যা ব্যবহার করে একটি কোম্পানি সফলতার শিখরে যেতে পারে। তবে যেনতেনভাবে মার্কেটিং মিক্সগুলো ব্যবহার করলেই সফলতা আসবে না। মার্কেটিং মিক্সগুলো ব্যবহার করতে হবে অনেক পর্যবেক্ষণ করে।
মূলত মার্কেটিং মিক্সগুলো হচ্ছে optimization function এর ভ্যারিয়েবল যাদের যথাযথ ব্যবহার করে সেলস কিংবা বিক্রয় বাড়ানো (maximization) সম্ভব।

মার্কেটিং মিক্সার উপাদানগুলো কতোটুকু বাড়ালে কিংবা কমালে সেলস কিংবা বিক্রয়ে সুবিধা পাওয়া যাবে তা দেখার জন্য একটি গাণিতিক পদ্ধতির নাম হচ্ছে মার্কেটিং মিক্স মডেলিং। ইদানিং কালে মার্কেটিং মিক্স মডেলিং গুরুত্ব আরো বেড়েছে কারণ আজকাল বেশিরভাগ কোম্পানির মার্কেটিং সংক্রান্ত খরচগুলোকে দেখা হয় ইনভেস্টমেন্ট কিংবা বিনিয়োগ হিসেবে। আর যে কোনো বিনিয়োগ তখনি ভালো হিসেবে গণ্য হয় যখন তার থেকে রিটার্ন ভালো হয় থাকে। আধুনিক যুগে আমরা এই বিষয়টিকে বলে থাকি মার্কেটিং রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (Marketing Return on Investment) কিংবা রিটার্ন অন মার্কেটিং ইনভেস্টমেন্ট (Return on Marketing Investment)। এই ধরণের ফর্মুলাগুলো নিয়ে অন্য একটি পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

মার্কেটিং মিক্স মডেলিংয়ের জন্য রিগ্রেশন এনালাইসিস (Regression Analysis) এর ব্যবহার বহুল প্রচলিত। রিগ্রেশন এনালাইসিস এ মূলত দুই ধরণের ভ্যারিয়েবল থাকে – ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল (Dependent Variable) এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল (Independent Variable) মার্কেটিং মিক্সের উপাদানগুলোর উপর নির্ভর করে বিক্রয়। তাহলে এই মডেলিংয়ের ক্ষেত্রে বিক্রয় হচ্ছে ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল আর বিক্রয়কে প্রভাবিত করে এমন উপাদানগুলো হচ্ছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল।

মার্কেটিং মিক্স মডেলিং এ ধরে নেয়া হয় যে, বিক্রয়ের মধ্যে মূলত দুই ধরণের কম্পোনেন্ট রয়েছে – বেসলাইন সেলস (যা মূলত সিসোনালিটি, ব্র্যান্ড আয়ার্নেস, ব্র্যান্ড লয়াল্টি ইত্যাদি উপাদানগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়) এবং ইনক্রিমেন্টাল সেলস (যা মূলত মার্কেটিং একটিভিটিগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়)। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে, যেমন: আপনি একটি কোম্পানির ব্র্যান্ড ম্যানেজার। বেশ কয়েক বছর থেকেই আপনার কোম্পানি advertising করে আসছে। সেই আলোকে আপনি জানেন যে, ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে আপনি ২০ লক্ষ টাকার বিক্রয় বাড়াতে পারবেন। এখন এই বিষয়টি হচ্ছে আপনার মোটের উপর একটি ধারণা মাত্র। এই পিছনে কিন্তু কোনো শক্ত যুক্তি নেই। এই ক্ষেত্রে মার্কেটিং মিক্স মডেলিং আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।

এখন মার্কেটিং মিক্স মডেলিংয়ের জন্য বেশ কিছু ভ্যারিয়েবল রয়েছে। এই ভ্যারিয়েবলগুলোর জন্য আমাদের অনেক রকম ডাটা সংগ্রহ করতে হবে। কি রকম ডাটা সংগ্রহ করতে হবে তা অনেকটা নির্ভর করে আমরা কোন ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করছি, কি ধরণের মার্কেট, কাস্টমার প্রেফারেন্স কেমন ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর। সবগুলো ডাটা নিয়ে মার্কেটিং মিক্স মডেলিংয়ের জন্য আমরা নিচের মতো একটি রিগ্রেশন একুয়েশন দাঁড় করে থাকি:
Sales (can also be Market share) = Bo + B1 x1 + B2 x2 + B3 x3

সাধারণত একটি মার্কেটিং মডেলিং মিক্স বিবেচনায় এই ধরণের ডাটাগুলো ব্যবহার করতে হয়- বিক্রয় কিংবা মার্কেট শেয়ার হচ্ছে মূলত ডিপেডেন্ট ভ্যারিয়েবল আর ডিস্ট্রিবিউশন, দাম, টিভি বিজ্ঞাপন খরচ, আউটডোর বিজ্ঞাপন খরচ, পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন বাবদ ব্যয়, কাস্টমার প্রমোশন ইনফরমেশন বাবদ খরচ, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাবদ খরচ, ওয়েবসাইট ভিসিটর্স ইত্যাদিকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভ্যারিয়েবল হিসেবে ধরে আমরা রিগ্রেশন একুয়েশনটি দাঁড় করিয়ে থাকি। রিগ্রেশন একুয়েশনে এ যে বিটাগুলো রয়েছে সে বিটাগুলো মূলত আমাদের প্রতিটি ইনপুটকে সংখ্যায় প্রকাশ করতে সাহায্য করে। মূলত, বিটা আমাদের জানিয়ে দেয় যে একটি মার্কেটিং ইনপুটের ১ ইউনিট বৃদ্ধিতে বিক্রয় কিংবা রেভিনিউ কতটা বৃদ্ধি পায় যখন অন্য মার্কেটিং ইনপুটগুলো কনস্ট্যান্ট থাকে।

আবার একটি বাস্তব জীবনের উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন আমরা আগোরা’র মার্কেটিং মিক্স মডেলিং করতে চাই। এইটা করার জন্য আমরা আগোরার অনেকগুলো ডিপার্টমেন্টের মধ্যে থেকে ২ টি ডিপার্টমেন্ট ঠিক করলাম। আবার আগোরার শাখা রয়েছে অনেক জায়গায়। আমরা কেবল ঢাকা শহরের মধ্যে দুটি শাখাকেই ধরলাম আমাদের কাজের জন্য। এখন আমরা আগোরার এই দুই শাখার দুটি ডিপার্টমেন্টের বিগত ২ বছরের বেশকিছু ডাটা সংগ্রহ করবো। যেমন:
সেলস : আমরা এই দুই বছরের প্রতি সপ্তাহের শেষের বিক্রয়ের পরিমানের (টাকায়) ডাটাগুলো সংগ্রহ করবো।
শাখা : যেহেতু আমরা দুটি শাখা নিয়ে কাজ করছি তাই শাখারগুলো সুবিধাজনক কোড কিংবা নামের সংক্ষেপিতভাবে উল্লেখ করতে হবে।
ডিপার্টমেন্ট : যে যে ডিপার্টমেন্টের পণ্য সেই ডিপার্মেন্টের নামকেও সুবিধাজনক কোড কিংবা নামের সংক্ষেপিতভাবে উল্লেখ করতে হবে।
বিজ্ঞাপন খরচ : পণ্যগুলোর বিজ্ঞাপন বাবদ বায়কে এই ক্ষেত্রে ধরতে হবে। বিজ্ঞাপন ব্যায় অনেক রকম হতে পারে যেমন টিভি বিজ্ঞাপন খরচ, আউটডোর বিজ্ঞাপন খরচ, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন খরচ, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন খরচ। এই ক্ষেত্রে এই খরচগুলোর কান্ট্রিবিউশন রেট বের করে তারপর তাদের বাবদ খরচ বের করতে হবে রিগ্রেশন করার জন্য।

মোটামুটি এই রকম করে আমরা একটি মার্কেটিং মিক্স মডেলিং দাঁড় করতে পারি। এখন কথা হচ্ছে পুরানো ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে মার্কেটিং মিক্স মডেলিং দাঁড় করানো সহজ কারণ এই ধরণের মডেলিং অতীত ডাটা নির্ভর। আমরা অতীত থেকে আগামীকে চিন্তা করি। কিন্তু একদম নতুন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আসলে এই ধরণের মডেলিং মিক্স করা কষ্টকর। আবার মার্কেটিং মিক্স মডেলিংয়ের জন্য যে ডাটা লাগে তা সংগ্রহ করা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহজ হলেও নতুন কিংবা ছোট ব্যবসায়ের জন্য তা মোটেও সুখকর নয়।


আরও পড়ুনঃ

মার্কেটিং নামা ১

মার্কেটিং নামা ০২ – কোয়ান্টিটেটিভ মার্কেটিং Quantitative Marketing

মার্কেটিং নামা ০৩ : ওয়ার্ড অফ মাউথ (Word of Mouth- WOM)

মার্কেটিং নামা ০৪ : গেরিলা মার্কেটিং Guerrilla Marketing

মার্কেটিং নামা ০৫ : কাস্টমার ফার্স্ট – Customer First

 


Nur-Al-Ahad

BBA (University of Dhaka, Bangladesh) 14th Batch
MBA (University Putra Malaysia, Malaysia)
Master of Engineering (Toyohashi Tech, Japan)
Email: nur.al.ahad.mkt@gmail.com

 


Share this article
Shareable URL
Prev Post

ম্যাক হুপার ক্যাম্পেইনঃ একটি পারফেক্ট গেরিলা মার্কেটিংয়ের গল্প!

Next Post

ব্র্যান্ড হারিয়ে যায় কেন?

Read next

Leadership When Hardship

  The pathway to an organization’s objectives shows how a leader has been played his/her role. The states…
0
Share