মার্কেটিং বিষয়টি নিয়ে আমাদের চারপাশে নানা রকম কথা প্রচলিত আছে. তবে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত কথা হচ্ছে মার্কেটিং হচ্ছে থিওরিটিক্যাল কিংবা তত্তীয় একটি বিষয়। আসলে এই ধারণার মুলে কাজ করছে আমাদের দেশে মার্কেটিং বিষয়টি পড়ানোর স্টাইলের কারণে। যে কোনো বিষয় হোক আমাদের দেশে তেমন করে খুব একটা গভীরভাবে পড়ানো হয় না, আবার ছাত্র-ছাত্রী যারা আছেন তারাও কোনো রকম সিলেবাস শেষ করে একটা ভালো সিজিপিএ নিতে পারলেই বাঁচেন। মোদ্দা কথা হলো আমাদের দেশে প্রকৃতভাবে শিক্ষনের যে ব্যাপারটি তা বরাবরই অবহেলিত।
যাই হোক, আজকাল মার্কেটিং কেবল কটলার সাহেবের বইখানার উপরই নির্ভরশীল নয়. মার্কেটিং অনেক বড় একটি জিনিস। বড় বড় কোম্পানিগুলো কি প্রোডাক্ট কখন বাজারে আনবে, তার চাহিদা কেমন হবে, আনুমানিক কত মুনাফা হতে পারে, বিক্রয় বাবদ কত খরচ যেতে পারে ইত্যাদি অনেক কিছুই মার্কেটিং বিষয়ের আওতায় পরে।
তাহলে প্রশ্ন উঁকি দিতে পারে মনের আঙিনায় মার্কেটিং এ সব দেখি তত্ত্বের ছড়াছড়ি। কিন্তু এই বিষয়গুলোর সাথে সংখ্যার সাথে সম্পর্ক? আসলে মার্কেটিংয়ের অনেকগুলো শাখা রয়েছে যার কেবল গুটিকয়েক সম্পর্ক আপনারা আমাদের দেশের বিবিএ কিংবা এমবিএ করে শিখতে পারেন।
আধুনিক যুগের মার্কেটিংয়ের শাখাগুলো হচ্ছে নিউরো মার্কেটিং, গরিলা মার্কেটিং, পারমিশন মার্কেটিং, কোয়ান্টিটেটিভ মার্কেটিং ইত্যাদি। আজকের আলোচনা এই কোয়ান্টিটেটিভ মার্কেটিং (Quantitative Marketing) নিয়েই। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, গণিতের সাথে মার্কেটিংয়ের এক যুগান্তকারী সম্পর্কের নামই হচ্ছে Quantitative Marketing কিংবা গাণিতিক বাজারজাতকরণ।
বড় বড় কোম্পানিগুলোতে মার্কেটিংয়ের কাজগুলোর আগে এবং কাজগুলোর পরে তাদের ফলাফল নিরুপনের জন্য Quantitative Marketing টুলসগুলো ব্যবহার করা হয়। যেমন, আপনি বাংলাদেশে একটি নতুন মোবাইল ফোন কোম্পানি খুলতে চান, আপনি জানেন বাজারে আরো বেশ কয়েকটি মোবাইল কোম্পানি রয়েছে। তাহলে আপনি কি করে নতুন কোম্পানি চালু করলে লাভবান হতে পারেন তার জন্য আপনার বেশ কিছু তথ্য লাগবে যেমন বাজারে মোট ক্রেতার সংখ্যা, মার্কেট শেয়ার এর পরিমান ইত্যাদি। এই সব জিনিসগুলো নিয়ে একটা Monte Carlo Simulation করলেই মোটামুটি আপনি ভালো একটি ধারণা পাবেন যা কেবল মাত্র তত্ত্বের মাধ্যমে ভালো করে জানা সম্ভব নয়।
এই বার একটি বাস্তব উদাহরণ দেয়া যাক, আমি বেশ কিছুদিন আগে একটা মেডিকেল ডিভাইসের মার্কেট পোটেনশিয়াল নিয়ে কাজ করেছিলাম; তো এই কাজে মূলত বাজারের ডাটাগুলোর সাহায্যে আমাকে সিমুলেশন করে দেখতে হয়েছিল যে কোম্পানি এই ডিভাইস যদি বাজারে আনে তাহলে তাদের খরচ পুষিয়ে উঠতে কতদিন লাগবে আর এই ডিভাইসটি বিক্রয় করে কোম্পানি কেমন মার্কেট শেয়ার দখল করতে পারবে।
আবার চিন্তা করুন আপনি একজন ব্যাবসায়ী, আপনার প্রোডাক্ট হচ্ছে কসমেটিক্স, আপনি আপনার প্রোডাক্ট কিংবা পণ্যের জন্য বেশকিছু প্রচার কার্যক্রম করলেন যাতে করে আপনার বেশকিছু টাকা খরচ হলো। এখন আপনি জানতে চান যে পরিমান টাকা খরচ হলো সে পরিমান কি কি জিনিস আপনার অর্জন হয়েছে? এই ক্ষেত্রেও কেবল বিক্রয় দেখে আপনি বলতে পারবেন না যে আপনার কি অর্জন রয়েছে। এই ক্ষেত্রেও কোয়ান্টিটেটিভ মার্কেটিং আপনাকে সাহায্য করবে আপনার প্রচার কার্যক্রমের ফলাফল জানতে।
বাইরের দেশে মার্কেটিংয়ের কাজগুলোতে সংখ্যার ব্যাবহার আজকাল অনেকগুন বেশি, আর এই কোয়ান্টিটেটিভ মার্কেটিং নিয়ে আমাদের দেশে অধিকাংশেরই কোনো ধারণা নেই। বাংলাদেশে একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে থাকাকালীন একটা সেমিস্টারে যখন আমি মার্কেটিংয়ের কোর্স নিলাম তখন ওদের চোখ উপরে উঠে গিয়েছিলো Quantitative Marketing নিয়ে।
আর সবচেয়ে মজার ব্যাপারটি ছিল ঐবারই প্রথম ওই ভার্সিটির মার্কেটিং বিষয়ের প্রশ্নে গাণিতিক সমস্যা ছিল যা মূলত কোয়ান্টিটেটিভ মার্কেটিংয়ের ছিল। আজকাল কেবল থিওরি ব্যবহারের দিন শেষ হয়েছে, যে কোনো থিওরিকে শক্তিশালী এবং বেশি গ্রহণযোগ্য করতে হলে গণিতের এবং পরিসংখ্যানের ব্যবহার করতেই হবে।
আরও পড়ুনঃ মার্কেটিং নামা ১
Nur-Al-Ahad
BBA (University of Dhaka, Bangladesh) 14th Batch
MBA (University Putra Malaysia, Malaysia)
Master of Engineering (Toyohashi Tech, Japan)
Email: nur.al.ahad.mkt@gmail.com